সাধারণ মানুষের অংশীদার হতে হলে পুজিবাজার যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই :এনআরবিসি ব্যাংক চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবিসি কমার্শিয়াল ব্যাংক লি:। আজ ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যাংকটির পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হতে গণপ্রস্তাব (আইপিও) আবেদন শুরু হচ্ছে। দীর্ঘ ১২ বছর পর পুঁজিবাজারে কোন ব্যাংক বাজারে নিবন্ধিত হচ্ছে। আমরা গ্রামের মানুষদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সিএমএসএমই থাকতে চেষ্টা করবো। এই চিন্তাভাবনা নিয়েই পুঁজিবাজারে আসা। বেশি বেশি মানুষের সাথে সম্পৃক্ততা গড়ে তুলবো এমন চিন্তা ভাবনা আছে। ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল। প্রতিটি ব্যাংক তফসিলি ব্যাংক এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। আর পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শর্তই থাকে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হতে হবে। যেহেতু সাধারণ মানুষের অংশীদার হতে হবে সেহেতু পুঁজিবাজারে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই। লাইসেন্স নেওয়ার সময় নিবন্ধিত হওয়ার সময়সীমা নির্দিষ্ট করা ছিল। নানা কারণে আমরা আসতে পারিনি। তবে ২০১৮ সালের শেষদিকে আমরা আবেদন করি। এটা একটা লম্বা প্রক্রিয়া শেষে গত নভেম্বরে আমরা অনুমোদন পেয়েছি। তবে করোনা সংকট না থাকলে আমরা আগেই আসার সুযোগ পেতাম। পুঁজিবাজারে আসার ক্ষেত্রে আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে হচ্ছে প্রকৃত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী হওয়া। সাধারণ মানুষের ব্যাংকে পরিণত হওয়ার ইচ্ছা। নিবন্ধিত হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি আমরা বিএসইসির নিয়ন্ত্রণের অধীনে আসবো। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতি আমাদের জবাবদিহীতা বাড়বে এবং ব্যাংকের কর্পোরেট গভর্ন্যান্স ভালো হবে। আমি মনে করি, একটি ব্যাংক তখনই ভালো করতে পারে যখন তার কর্পোরেট গর্ভনেন্স এবং কমপ্লায়েন্স ভালো থাকে। পারভেজ তমাল: দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করার জন্য ক্যাপিট্যাল মার্কেটই প্রধান। কিন্তু বাংলাদেশে গত এক যুগের যে পরিবর্তন, তার প্রধান ভূমিকাই কিন্তু রাখছে বেসরকারি ব্যাংক। তারা এগিয়ে আসছে, সাহস দেখিয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে আমরা প্রথম সাহস সঞ্চয় করেছি। আজকে তার সুবাদেই কথা বলছি যে, আমরা ওই দিকেই যাবো। ব্যাংকের কাজ হলো নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা। বেশি বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করা। আবার দেখেন,বাংলাদেশের আইটি সেক্টরে কোন ফাইন্যান্স হচ্ছে না, কোন ব্যাংকও বুঝতে চাইছেনা, এটা একটা বড় সম্ভাবনাময় সেক্টর। নিচের দিকে অর্থনীতির মেরুদন্ড কৃষি খাতে আরো বেশি বিনিয়োগ দরকার। যদিও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, এখন দরকার রপ্তানি করা।
আমাদের সত্যিকার উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, বিভিন্ন আর্থিক, সামাজিক কাঠামোতে পরিবর্তন আসছে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সম্পৃক্ত থাকা। আমরা নিচের স্তরে ব্যাংকিং করতে চাই এবং সেই উদ্দেশ্য নিয়েই পুঁজিবাজারে আসছি। আমাদের নতুন চিন্তাভাবনা গ্রাম থেকে শহর, নিচের দিকে সরকারের বিভিন্ন কালেকশনের সাথে জড়িত থাকা।বেশি বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, বিনিয়োগে উৎসাহিত করা, সিএমএসএমইতে থাকা, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা।

পারভেজ তমাল আরও বলেন: আপনি জানেন যে আমরা ৪৪৬ কোটি টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। এখন মূলধন ৫৭১ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি জনগনের জমানো অর্থ আছে ১০ হাজার কোটি টাকা। নিবন্ধিত হওয়ার আবেদনের সময় আমাদের চিন্তা করতে হয়েছে মার্কেটে চাপ সৃষ্টি হবে কীনা। তবে এই মুহূর্তে মার্কেট বেশ সচল, নতুন ইনভেস্টমেন্ট বাড়ছে, নতুন ইনভেস্টমেন্টের সম্ভাবনা বাড়ছে, অনেক কোম্পানী ভাল করছে, উর্দ্ধগতিতে আছে, তেজীভাব আছে। মার্কেট থেকে আমাদের যে ১২০ কোটি আসবে সবমিলিয়ে ব্যাংকের জন্য এটা খুব বড় একটা টাকা না। কারণ আমরা ১০ হাজারকোটি টাকার আমানত নিয়ে কাজ করি। আমরা এই ১২০ কোটি টাকার কিছু টাকা আইপিওর কাজে ব্যবহার করবো, বন্ডে বিনিয়োগ করবো এবং সেকেন্ডারি মার্কেটেও থাকবো। আমরা নিচের দিকের ব্যাংকিং বিশেষ করে মাইক্রো ক্রেডিট এবং রিটেইল ব্যাংকিং এ কাজে লাগাবো। এই ইনভেস্টমেন্টটা হবে সুদূর প্রসারী এবং কাঠামোগত। কারণ আমরা চাচ্ছি যে, আমাদের ব্যাংক অনেক মানুষকে ঋণ দেবে। আমরা আসলে এমন না যে,আমরা একজন কাস্টমারকে ঋণ দেবো, স্বল্প সংখ্যক মানুষের জন্য কাজ করবো। আমরা কিন্তু এখন ৫০০ লোকেশনে ব্যাংকিং করছি, যার ৭৫ শতাংশ গ্রামে। করোনা ভাইরাসের মধ্যেও দেশের অর্থনীতি এগিয়েছে, এটি আসলে সরকারের প্রচেষ্টার ফসল। করোনায় সারাবিশ্ব কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে সরকারের প্রচেষ্টা ছিল অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা। রপ্তানিতে বিশাল ধস নেমেছে। সেখানে একটা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সরকার একটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। নিচের দিকের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। বেশিদিন লকডাউন ছিল না। সরকারের সাহসিকতা আর চ্যালেঞ্জের কারণে বেসরকারী ব্যাংকগুলো সম্মুখযোদ্ধার মত কাজ করেছে। কোভিডের মধ্যেও জিডিপির যে প্রবৃদ্ধি রয়েছে, এটা আমাদেরকে আরো সাহস দেবে এবং ভবিষ্যতে যে চ্যালেঞ্জ আছে ৮, ৯, ১০ শতাংশ অর্জন করতে চাচ্ছি এখান থেকে সেটা পারব।
তিনি বলেন, আমাদের প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ বা তারও বেশি প্রবাসী আছে, তারমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়শিয়াতেই বেশি।সেখানে অনেক ব্যাংকের সাথে অনেকগুলো রেমিট্যান্স হাউজ কাজ করছে। আমরা রেমিট্যান্স হাউজগুলোর সাথে কাজ করছি। তাদের সাথে বিভিন্ন সভা সেমিনার করে বুঝাচ্ছি যে, সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা উচিৎ। এই কারণে করোনার মধ্যেও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্বাভাবিক ছিল। আবার সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমাদের দরকার হলো অল্প খরচে কিভাবে প্রবাসীরা টাকা পাঠাতে পারবেন। তাদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পথকে সহজ করে দেয়া। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে প্রথমত যে কাজটা করছি ই-কেওয়াইসি মাধ্যমে প্রবাসীদের অ্যাকাউন্ট করা এবং সচল রাখার ব্যাপারে কাজ চলছে। চেয়ারম্যান আরও বলেন: আমরা যারা স্পন্সর শোযারহোল্ডার রয়েছি তাদের একটা আলাদা উদ্দেশ্য আছে। আমরা দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের সাথে যুক্ত থাকতে চাই। পাশাপাশি দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করতে চাই। ব্যাংক সেক্ষেত্রে বড় একটি প্লাটফর্ম। যেখান থেকে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা যায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করা যায়। ব্যাংক বড় ধরণের সার্ভিস সেন্টার,যেটা ব্যবহার করে মানুষ বিভিন্ন সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। আপনারা জানেন যে, কর্পোরেট সোস্যাল রেসপন্সিবিলিটির জায়গা থেকে ব্যাংক লাভের ১০ শতাংশ ব্যয় করে থাকে। আমরা এই টাকা শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বিভিন্ন দুর্যোগে ব্যয় করে থাকি। করোনা ভাইরাসের মহামারির মধ্যে আমাদের কার্যক্রমগুলো আপনারা দেখেছেন। আমরা সেই সময়ে সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ জরুরি কাজে নিয়োজিতদের সুরক্ষা সামগ্রী দিয়েছি। চিকিসকদের সমন্বয়ে আমরা কল সেন্টার করেছি। বিভিন্ন প্রত্যন্ত উপজেলায় করোনা পরীক্ষার বুথ স্থাপন করেছি। আসলে ব্যাংক হলো একটা সার্ভিস সেন্টারের ভূমিকা পালন করে থাকে। ব্যাংকিং কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কিছু সেবা সরবারহের মাধ্যমে আমাদের স্বতন্ত্রতা প্রকাশ পেয়েছে। একদিকে আমরা ৮৩টি শাখার মাধ্যমে সেবা দিচ্ছি, অন্যদিকে বিআরটিএ ও ভূমি রেজিস্ট্রেশনবুথসহ ৪০০টি উপশাখা ও ৫৮৯টি এজেন্ট বুথের মাধ্যমে একেবারে নিন্ম আয়ের মানুষদের পাশে গিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে বিনিয়োগে সুইস ব্যাংক রোড শো করবে: বিএসইসি চেয়ারম্যান
পরবর্তী নিবন্ধরাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিন ৯২ শতাংশ কার্যকর