‘শাড়ি পরতে না পারা নারীদের লজ্জিত হওয়া উচিত’

পপুলার২৪নিউজ ডেস্ক:

সব্যসাচী বলেন, যদি কেউ আমাকে বলেন যে, আপনারা জানেন না কীভাবে শাড়ি পরতে হয়, তা হলে বলব- আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত৷ এটি সংস্কৃতির অংশ৷ প্রত্যেকেরই উচিত নিজেদের সংস্কৃতির পাশে দাঁড়ানো৷

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডিয়া কনভেনশনে বক্তৃতাকালে শিক্ষার্থীদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

সব্যসাচী দীর্ঘদিন ধরে শাড়ি নিয়ে কাজ করছেন৷ তার তৈরি পোশাক পরার জন্য মুখিয়ে থাকেন মুম্বাইয়ের বিখ্যাত অভিনেত্রীরা৷ রানী মুখার্জি থেকে ঐশ্বরিয়া রাই- সবাই তার পোশাক নিয়ে মুগ্ধ৷ পৃথিবীর সব বড় বড় ফ্যাশন শোয়ে সব্যসাচী একটি নাম৷ তার বাচনভঙ্গি, বক্তব্য, ভাবনা নিয়েও সবার উচ্চ ধারণা ছিল৷ কিন্তু হার্ভার্ডে সব্যসাচী এ কথা বলার পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার বক্তব্যের নিন্দা হয়৷ বলা হয়, সব্যসাচীর বক্তব্য নারীবিদ্বেষী৷ অপমানজনক৷ যে নারীরা শাড়ি পরেন না বা পরতে পারেন না, কেন তাদের লজ্জা পেতে হবে- সে প্রশ্নও ওঠে৷

কেউ কেউ আরও গভীরে গিয়ে প্রশ্ন করেন, ভারতের সব রাজ্যে শাড়ি সত্যিই ঐতিহ্য তো? সব্যসাচী জানেন কি যে, দেশের সর্বত্র ঐতিহ্যবাহী পোশাক যে শাড়ি নয়!

দীর্ঘ প্রতিবাদের পর সামাজিকমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পর পর তিনটি পোস্ট দেন সব্যসাচী। সেখানে প্রথম পোস্টে তিনি বলেন, ‘লজ্জা’ শব্দটি ব্যবহার করার জন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী৷ ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটুকু অন্তত দেয়া হোক তাকে৷ শুধু তাই নয়, কোন পরিস্থিতি কোন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে, কেন তিনি এ কথা বলেছেন, তার উত্তরও দেন সব্যসাচী৷

দ্বিতীয় পোস্টে সব্যসাচী লেখেন, ১৬ বছর ধরে তিনি শাড়ি নিয়ে কাজ করছেন৷ অনেক সময়েই শাড়ি নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে নানা বিরূপ মন্তব্য শুনেছেন৷ মেয়েদের গর্ব করে বলতে শুনেছেন যে, তারা শাড়ি পরতে পারেন না৷ এগুলো কোনোদিনই মেনে নিতে পারেননি তিনি৷তারই পরিপ্রেক্ষিতে কথাগুলো বলেছিলেন হার্ভার্ডে৷

তৃতীয় পোস্টে তিনি লেখেন, তার সঙ্গে যারা কাজ করেন, তাদের অনেকেই নারী। তাদের সর্বোচ্চ বেতন দেন বলেও জানান৷ কারণ তারা সেই বেতন পাওয়ার যোগ্য৷ অর্থাৎ ব্যক্তিগত স্তর থেকে সংস্থা পর্যন্ত কোথাও নারীবিদ্বেষী কোনো কাজ তিনি করেন না৷ শুধু তাই নয়, জানিয়েছেন প্রত্যেক শুক্রবার তার সংস্থার কর্মীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন৷

সব্যসাচী ক্ষমা চাইলেও বিতর্ক এখনই থামছে না৷ সব্যসাচীর বক্তব্য ধরে ফিরে এসেছে পুরনো বিতর্ক৷ ভারতীয় ঐতিহ্য বলতে যা বোঝানোর চেষ্টা করে কোনো কোনো ধর্মীয় সংগঠন কিংবা উগ্র রাজনৈতিক দল, সব্যসাচীর মনোভাবের মধ্যেও কি একই আভাস দেখা যাচ্ছে না?

কেউ কেউ বলছেন, আসলে মূলস্রোতের ভারতীয়রা ঐতিহ্যের কথা বলার সময় ভারতের বৈচিত্র্যের কথাটিই মনে রাখেন না৷ তাই ঠিক যে অজ্ঞতা থেকে তারা উত্তর-পূর্বের মানুষদের ভারতীয় বলে মনে করেন না, ‘চিংকি’ বলে গালাগাল করেন, ঠিক একইভাবে তাদের সংস্কৃতিকেও গুরুত্ব দেন না৷ লক্ষণীয় গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে কিংবা কাশ্মীরে কিংবা আদিবাসী জঙ্গলে শাড়ি পরার প্রচলন নেই৷

মণিপুরের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের নাম ইন্নাফি ও ফানেক৷ মিজোরামের নারীরা পরেন পুয়ান৷ নাগাল্যান্ডে নারীদের পোশাকের নাম আজু জাংনুপ পু৷ কাশ্মীরের পুরুষ-নারী নির্বিশেষে পরেন ফিরান ও পুট৷ এসবের কোনোটির সঙ্গেই শাড়ির সামান্যতম সংযোগ নেই৷ এভাবে তালিকা বানালে দেখা যাবে, ভারতের বহু অঞ্চলেই শাড়ি ঐতিহ্য নয়৷

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবননগরে আসামি ধরতে গিয়ে ৩ পুলিশ আহত
পরবর্তী নিবন্ধসুনামগঞ্জে বিএনপির কার্যক্রম চলে ছাত্রদলের নেতৃত্বে