ভারতে গোঁফ রাখায় দলিতদের ওপর উচ্চবর্ণের হামলা

পপুলার২৪নিউজ ডেস্ক:

ভারতের গুজরাট রাজ্যে নিম্নবর্ণের দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য গোঁফ রাখায় তাদের ওপর একের পর এক  হামলা করছে উচ্চবর্ণের লোকজন।

গত কয়েক দিনে গোঁফ রাখার অজুহাতে অন্তত চারজন দলিতের ওপরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত সপ্তাহে দলিত শ্রেণির এক যুবক গরবা নাচ দেখতে গিয়ে খুন হন।

এসব ঘটনার জের ধরে নিজেদের গোঁফসহ ছবি দিয়ে সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল বানিয়ে এক অভিনব প্রতিবাদ শুরু করেছেন দলিতরা।

এ ছাড়া গুজরাটে একের পর এক হামলার দায় নিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন দলিত যুবকরা। এ বিক্ষোভ থেকে গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

দলিতরা বলছেন,  তাদের ওপরে আক্রমণের কোনো  সাজা হয় না বিজেপি শাসিত গুজরাটে। অথচ সেই রাজ্যেরই সব থেকে পরিচিত ব্যক্তিত্ব মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী এই দলিতদেরই আপন করে নিয়ে হরিজন নাম দিয়েছিলেন।

১৭ বছর বয়সী দলিত ছাত্র দিগন্ত মাহেরিয়া যখন মঙ্গলবার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল, তখন দুই অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলে চেপে এসে তার পিঠে ব্লেড চালিয়ে দেয়। তার এক দাদা পিযুষ পারমা গত সপ্তাহে মার খেয়েছে গ্রামেই।

তাদের অপরাধ, দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ হয়েও তারা গোঁফ রেখেছিল।

সন্দেহ করা হচ্ছে, আক্রমণকারীরা রাজপুত সম্প্রদায়ের। যারা মনে করে যে দলিত শ্রেণির মানুষের গোঁফ রাখার অধিকার নেই।

তার পরেই গুজরাটের দলিতরা সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের ছবি বদলে দিতে শুরু করেন। নিজের ডিসপ্লে পিকচারে গোঁফ সহকারে ছবি দিচ্ছেন তারা।

দলিতদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেন জিগনেশ মেওয়ানী।  দলিতদের ওপরে ক্রমাগত আক্রমণের প্রতিবাদে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে একটি মিছিল থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন মেওয়ানীসহ আরও অনেকে।

হাজত থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েক মিনিট  পরেই তিনি বলেন, গত বছর উনাতে চারজন দলিতকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল, যা নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছিল।

মেওয়ানী বলেন, কিন্তু গুজরাটে দলিতদের ওপরে তার থেকে বহু গুন বেশি অত্যাচার প্রতিদিন ঘটছে। আর এই এত বছর ধরে সেসব অত্যাচারের কোনও বিচার হয় নি। রাজ্যে দলিতদের ওপরে অত্যাচারের ১০০টা ঘটনা হলে, ৯৭ জন অভিযুক্তই ছাড়া পেয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, সব ঘটনাতেই উচ্চবর্ণের লোকেরা জড়িত। তাই বিজেপি শাসিত সরকার বলতে গেলে কিছুই করে না। এতদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ এবারে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে।

মেওয়ানীর কথায়, শুধু গোঁফ রাখার কারণে উচ্চবর্ণের লোকেরা দলিতদের মারছে। নবরাত্রির উৎসবে গরবা নাচ দেখতে গিয়েছিল বলে এক দলিত যুবককে দেয়ালে মাথা ঠুকে দিয়ে মেরে ফেলা হল- এসবই হচ্ছে সত্যিকারের গুজরাট মডেল, যে মডেলের কথা নরেন্দ্র মোদি সারা দেশে বলে বেড়াচ্ছেন।

তিনি বলেন, মোদি গান্ধীজির কথা বলেন। গান্ধীজি দলিতদেরই হরিজন বলে আপন করে নিয়েছিলেন। তাদেরই আজ এই অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে গুজরাটের গ্রামে গ্রামে।

সদ্য চালু হওয়া বিবিসির গুজরাটি বিভাগের সাংবাদিক দীপক চুডাসামার কাছে  জানতে চাওয়া হয়েছিল- ডিসেম্বরে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলিতদের এই ক্ষোভ কি বিজেপিবিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা?

তার জবাব ছিল, বিজেপি উচ্চবর্ণের দল হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। আর কেন্দ্র ও রাজ্য – দুই জায়গাতেই তাদেরই সরকার; অথচ দলিতদের ওপরে একের পর এক অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসছে; অথচ সরকারকে কোনো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, তাই বিজেপিবিরোধী বিক্ষোভ তো বাড়ছেই। তবে শুধু দলিতরা বিজেপিকে খুব একটা বেগ দিতে পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু পাটিদার সম্প্রদায়ও আগেই বিজেপির সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেছে। অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষেরও ক্ষোভ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গেই যদি এই দলিতদেরও বিক্ষোভ শুরু হয়, তা হলে সেটি তো বিজেপিকে নির্বাচনে কিছুটা হলেও বেগ দেবে।

লক্ষণীয় বিষয় হল, যে সামাজিক মাধ্যমকে নিজেদের প্রচারের সব থেকে বড় হাতিয়ার করে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, এই দলিত যুবকরাও কিন্তু সেই মাধ্যমকেই বেছে নিয়েছেন নিজেদের প্রতিবাদ জানানোর জন্য।

বিশ্লেষকরা বলছেন এখনই হয়তো দলিত শ্রেণির সব মানুষ এক জায়গায় আসতে পারছেন না; কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে গোঁফসহ নিজের ছবি লাগিয়ে প্রতিবাদটা তারা ছড়িয়ে দিতে পারছেন অনেক সহজেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইরাকে আইএসের গুরুত্বপূর্ণ হাওয়াইজা ঘাঁটির পতন
পরবর্তী নিবন্ধফরিদপুরের পদ্মায় ইলিশ ও জালসহ ২৫ জেলে আটক